শাহীনুর ইসলাম : খান সন্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁও টেক্সটাইল লিমিটেডে পরিবর্তন আসছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পরিচালিত বৃহৎ কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠেছে। যে কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের নিয়ে ভাবছে গ্রুপ অব কোম্পানির কর্তৃপক্ষ।
আগামীতে কোম্পানির ক্যাটাগরী পরিবর্তন করে সহযোগী কোম্পানিকে একীভূতকরণ এবং গ্রুপের নতুন কোম্পানিকে আইপিওর (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আভাস দিয়েছে।
খান সন্স গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আনোয়ার হোসাইন সম্ভাবনার এমন আভাস দেন। খান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁও টেক্সটাইল লিমিটেডের ক্যাটাগরী পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা আগের চেয়ে অনেকটা ভালো অবস্থানে আছি। যে কারণে আগামীতে বিনিয়োগকারীদের সম্মানিত করে আমরা পরিবর্তন আনতে চাই।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গত বুধবার দুপুরে কোম্পানির নিজস্ব ভবনের অফিসে তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সাক্ষাতকারে কোম্পানির বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, গ্যাস ভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট তৈরির জন্য এবং সাবসিডিয়ারি (সাশ্রয়ী) রেটে বিদ্যুৎ সরকারের কাছে আমরা আবেদন করেছি। দক্ষিণাঞ্চলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আর বড় কোন প্রতিষ্ঠান নেই। চলমান সোনারগাঁ টেক্সটাইলের মিলে প্রায় ৩ হাজার লোক চাকরিতে রয়েছে।
গ্যাস প্লান্টের অনুমোদন পেলে আমরা ব্যবসা আরো বাড়াবো। আমাদের ১০ একর জমির ওপর মিল রয়েছে। গ্যাস প্লান্ট না থাকায় কো্ম্পানির প্রতিমাসে প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকা বিদ্যুৎখাতে ব্যয় হচ্ছে। ব্যয় বাড়ার কারণে আমরা ৩ বছর ধরে লভ্যাংশ দিতে পারি না। সরকার আমাদের এখনই সংযোগ দিলে আগামীকালই আমরা উৎপাদন বাড়াবো। আমাদের সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে।
টেক্সটাইল একটি এসেনসিয়াল পণ্য। বস্ত্র, মানুষের লাগবেই। যে কারণে নতুন রুপে প্রস্তুতি নিয়েছি বলেন আনোয়ার হোসাইন।
খান সন্স গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আনোয়ার হোসাইন বলেন, গুলশানের জঙ্গি হামলার পরে দেশি-বিদেশী সব ব্যবসায়ী আতঙ্কে রয়েছে। এমন হামলা সব সময় ব্যবসার নেতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করে। তবে এমন ঘটনায় আমাদের কোম্পানিতে এখনো কোন প্রভাব পড়েনি। যদিও আগামীর কথা এখন বলা যাচ্ছে না। আমাদের স্পিনিং মিলস রয়েছে, আমরা সুতা উৎপাদন করে থাকি। এসব সুতা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আমরা দিয়ে থাকি। তারা বিভিন্ন কোম্পানি-কারখানায় (লোকাল এলসি) ব্যবহার এবং দেশের বাইরে রপ্তানী করে। তবে আমরা এখনো রপ্তানী করি না।
কাঁচামাল আমদানী সম্পর্কে তিনি বলেন, সুতা এখন বেশিরভাগ ভারত থেকে আমদানী করা হয়। বাংলাদেশ থেকে যা উৎপাদন হয়, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। আমদানী নির্ভর আমাদের ব্যবসা।
হরতাল আমাদানী-রপ্তানী সম্পর্কে খান সন্স গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বলেন, বিগত দিনে সোনারগাঁ টেক্সটাইল হরতালে প্রায় দেয় মাস বন্ধ ছিল। সে সময়ে অনেক ক্ষতি হয়েছে। তা পূরণ করতে আমাদের দুবছর সময় লেগেছে। ব্যয় বাড়ায় তিন বছর আমরা লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারিনি। এরই মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত ব্যয়।
বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পর্কে তিনি স্টক বাংলাদেশকে বলেন, কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক ব্যয়বহুল। আমরা সরকারের কাছে চেয়েছিলাম বা চাই গ্যাস ভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট। এখনো আমাদের যোগাযোগ চলছে। আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব এখনো সেই চেষ্টা করছেন। মিলটা কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায় সে চেষ্টাই এখন আমাদের সবার।
কোম্পানির ‘জেড’ ক্যাটাগরি পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা তা চেষ্টা করছি। ২০১০ সালে আমরা একবার রাইট শেয়ার নিয়েছিলাম। এরপরে কা্েুকে হতাশ করিনি; অনেকটা ভালো করেছি। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেক প্রত্যাশাও পূরণ করেছি। কিন্তু বিদ্যুৎতের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এরপরে তিন বছর তাদের প্রত্যাশার সে প্রতিফলন দেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এবারে আমরা সেই পরিবর্তন আনবো। তাদের জন্য সুখবর, এবারে আমরা ক্যাটাগরী পরিবর্তন করবো।
আবারো সেপ্টেম্বর মাসে সরকারের বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের দাম বৃদ্দির সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যয় বৃদ্ধি সম্পর্কে আনোয়ার হোসেন বলেন, সোনারগাঁও টেক্সটাইল অনেক পুরাতন মিল। কেউ চাইবে না এটা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। এটার সঙ্গে অনেক মানুষের অন্ন-সংস্থান জড়িত।
তবে সাবসিডিয়ারি (সাশ্রয়ী) রেটে সরকার আমাদের বিদ্যুৎ প্রদান করলে তখন আরো নতুন চিন্তা করতে পারি। কিন্তু এই রেটে সরকার কোথাও বিদ্যুৎ প্রদান করেছে কি-না, আমার জানা নেই। তবে দক্ষিণাঞ্চলের হাজারো মানুষের দাবি- এই মানুষগুলোকে বাঁচাতে হলে সরকারকে আগে সাবসিডিয়ারি রেটে বিদ্যুৎ দিয়ে টেক্সটাইল মিল দুটোকে বাঁচাতে হবে। নতুন করে দাম বাড়লে আরো বিডম্বনার সৃষ্টি হবে।
খান সন্স গ্রুপের স্পিনিং মিলস রয়েছে ৩টি। সোনারগাঁও টেক্সটাইল, মাদারীপুর টেক্সটাইল এবং খান সন্স টেক্সটাইল। এরমধ্যে সোনারগাঁও, মাদারীপুর টেক্সটাইলস দুটোই বিদ্যুৎভিত্তিক পরিচালিত। খান সন্স অটোমোবাইলস নামেও একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সোনারগাঁও টেক্সটাইল ছাড়া খান সন্স গ্রুপের অন্য কোন প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। তবে আগামীতে নতুন এবং অনেক ভালো কোম্পানি নিয়ে আমরা আইপিওতে আসবো। খান সন্স টেক্সটাইল এবং সোনারগাঁও টেক্সটাইল একীভূত করার সম্ভানাও রয়েছে। অথবা আইপিওর মাধ্যমে নতুন রুপেও আসতে পারি বলেন আনোয়ার হোসাইন।
খান সন্স টেক্সটাইলের জমির পরিমাণ ২৮ একর এবং সোনারগাঁও টেক্সটাইলের জমির পরিমাণ ১০ একর। মিলের আয়তন হিসেবে খান সন্সে স্পিন্ডিল রয়েছে ৩৫ হাজার এবং সোনারগাঁয়ে রয়েছে ৭২ হাজার। আয়তনে খান সন্স অনেক বড় মিল।
তবে খান সন্স স্পিনিং মিলস সম্পর্কে সরকার এখনো সব সময় খবর রাখে- এটা কেমন চলছে? কারণ, এটা বিটিএসসির প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৫ সালে খান সন্স গ্রুপ এটা কিনে নিয়েছে। বিসিক এরিয়ায় হওয়ায় বেশ ভালো চলছে। ভবিষ্যৎতে এটাই আমরা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বা একীভূতকরণ করতে পারি।
খান সন্স গ্রুপের অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তিনি বলেন, বরিশালে পুলিশ লাইনের পাশে কাউনিয়ায় খান সন্স হোল্ডিংস নামে আবাসন একটি প্রজেক্ট চালু রয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে অনেকে তাদের জমি বুঝে নিয়েছেন; ফ্লাট করেছেন। এ ছাড়াও আমদের গ্রুপে একটি সিমেন্ট কোম্পানি আছে- অলিম্পিক সিমেন্ট কোম্পানি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এটি বেশ সমাদৃত। কারণ, খুব অল্প সময়ে কালো এই সিমেন্ট (এ্যাংকর) জমাট বাঁধে।
এটি অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরো রয়েছে- সিমেন্টের ব্যাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও। একই সঙ্গে এই গ্রুপে সিলেটে ইকোনমিক জোন নামে একটি প্রকল্প চালু করা হচ্ছে।
তবে আমরা এখন আশাবাদী- আমরা ভালো করবো। আগের চেয়ে অনেকটা ভালো অবস্থানে আমরা আছি। আগামীতে আমাদের বিনিয়োগকারীদের সম্মানিত করতে চাই। ‘জেড’ ক্যাটাগরী পরিবর্তন করে অর্থনৈতিক দিক থেকে খান সন্স আরো শক্ত অবস্থান নিতে চায়।
এজিএম সম্পর্কে খান সন্স গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আনোয়ার হোসাইন আরো বলেন, আমরা আপাতত এজিএম করছি না; অনেক কারণে স্থগিত করেছি। তবে কেম্পানির এজিএম হবে আগামী ডিসেম্বরে।