স্টাফ রিপোর্টার : করোনা মহামারির মধ্যেও এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ৪ মাসে ১১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আদেশ এসেছে পোশাক খাতে। এসময়ে স্থগিত হওয়া ৮ বিলিয়ন ডলার ক্রয়াদেশের ৮০ শতাংশই ফিরে এসেছে। কিছু কারখানায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্রয়াদেশ এসেছে। ফলে করোনা মহামারির শুরুর দিকের বিপর্যস্ত পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
এদিকে দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। চলতি মাসের তিন সপ্তাহ শেষ। অথচ গত সোমবার রাতে বিজিএমইএর পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, এ সংকটকালীন সময়েও পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সদস্যভুক্ত ১১২টি তৈরি পোশাক কারখানায় এখনো শ্রমিকদের জুন মাসের বেতন হয়নি।
বেতনের দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই করোনা পরিস্থিতিতেও শিল্প এলাকাগুলোতে শ্রমিক বিক্ষোভ চলছে। এরইমধ্যে করোনা সংকট শুরুর পর বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় কয়েকশো কারখানা।
এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার ঘোষিত এ বিশেষ ঋণ সুবিধা ব্যবহার করে শ্রমিকদের এপ্রিল, মে ও জুনের মজুরি পরিশোধ করেছেন পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। এবার জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের মজুরি পরিশোধের জন্য আরো সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা পেতে যাচ্ছে পোশাক খাত। এরই মধ্যে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে এমন প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিজিএমইএ-এর সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৯২৬টি তৈরি পোশাক কারখানা চালু রয়েছে। এর মধ্যে গত সোমবার পর্যন্ত ১ হাজার ৮১৪টি পোশাক কারখানা তাদের শ্রমিকদের জুন মাসের বেতন দিয়ে দিয়েছে। তবে ১১২টি কারখানা এখনো তাদের শ্রমিকদের জুন মাসের বেতন পরিশোধ করেনি।
এর আগে গেল ৭০টির মতো পোশাক কারখানার শ্রমিকরা মে মাসের বেতনও পায়নি। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, যেসব পোশাক কারখানা এখনো শ্রমিকদের বেতন দেয়নি সেই কারখানাগুলোর অধিকাংশই আকারে ছোট। সেসব কারখানায় গত এপ্রিল মাসেও শ্রমিকদের শতভাগ বেতন দেয়া হয়নি।
গত সোমবার তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২০ জুলাই পর্যন্ত তাদের সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৯২৬টি কারখানার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় রয়েছে ৩৩৩টি। এর মধ্যে জুন মাসের বেতন-ভাতা দিয়েছে ২৯২টি প্রতিষ্ঠান।
গাজীপুরের ৭১৩টি কারখানার মধ্যে বেতন দিয়েছে ৭০৮টি, সাভার আশুলিয়ার ৪১২টি কারখানার মধ্যে বেতন দিয়েছে ৩৯৯টি কারখানা, নারায়ণগঞ্জে ১৯৮টি পোশাক কারখানার মধ্যে জুন মাসের বেতন পরিশোধ হয়েছে ১৮৩টিতে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২৫২টি পোশাক কারখানার মধ্যে ২১৪টি কারখানা শ্রমিকদের জুন মাসের বেতন পরিশোধ করেছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ১৮টি কারখানার মধ্যে ১৮টিতেই পোশাক শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।
এর আগে মে মাসে বিজিএমইএ-এর সদস্যভুক্ত দেশের ৯৬ শতাংশ পোশাক কারখানা তাদের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছিল। গত এপ্রিল মাসে ৯৮ শতাংশ পোশাক কারখানা শ্রমিকদের বেতন দিয়েছিল। বিজিএমইএর জনসংযোগ সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান খান মনিরুল আলম শুভ জানিয়েছেন, জুলাই মাসের বাকি দিনগুলোর মধ্যে আরো কিছুসংখ্যক কারখানা তাদের শ্রমিকদের জুন মাসের বেতন পরিশোধ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।