স্টাফ রিপোর্টার : পুঁজিবাজারে অভিন্ন ফেস ভ্যালু ও মার্কেট লট পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি কোম্পানির ফেস ভ্যালু পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আইসিবি, বিএসসি ও জনতা ইন্স্যুরেন্সের ১০০ টাকার ফেস ভ্যালুতে রয়েছে।
শতভাগ স্প্লিটের পথে বাধা হয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছ- ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। কেননা ফেস ভ্যালু পরিবর্তনের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান দুটি এখনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইসিবি ও বিএসসি ছাড়া প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের ফেস ভ্যালু অভিন্ন রয়েছে। ইতোমধ্যে গত বুধবার বিএসইসির ৪৯৬তম কমিশন সভায় জনতা ইন্সুরেন্স ফেস ভ্যালু পরিবর্তনের অনুমোদন পেয়েছে। জনতার ফেস ভ্যালু ১০০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা করা হলেও তা আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা এবিষয়ে আশঙ্কা রয়েছে।
জনতার পর আরও বাকি দুইটি প্রতিষ্ঠান। পুঁজিবাজারে শতভাগ স্প্লিঠের পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রাষ্ট্রয়াত্ব প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে স্পিটের ঘোষণা দিয়েও প্রতিষ্ঠানগুলো ফেস ভ্যালু পরিবর্তন করেনি। এজন্য রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান আইসিবি ও বিএসসিকে দায়ী বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ঠরা। কেননা কর্তৃপক্ষের নীতি নির্ধারণীর অভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো ফেস ভ্যালু ও মার্কেট লট পরিবর্তন করতে পারেনি।
নির্দেশ দেয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই ১০০ টাকার ফেস ভ্যালুতে রয়েছে আইসিবি ও বিএসসি ও জনতা ইন্স্যুরেন্সের। বুধবার বিএসইসির অনুমোদন পাওয়ার পর শিগগিরই জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের ফেস ভ্যালু অভিন্ন হবে। কিন্তু পুঁজিবাজারে শতভাগ স্পিটের পথে বাধা হয়ে রয়েছে আইসিবি ও বিএসসি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ফেস ভ্যালু ইস্যুতে কারসাজি রোধ করতে ২০১১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানিকে অভিন্ন ফেস ভ্যালু (১০ টাকা) করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এক্ষেত্রে ডেডলাইন হিসেবে ৩০ নভেম্বর ২০১১ পর্যত্ম বেঁধে দেয়া হয়। সে সময় তালিকাভুক্ত মূল মার্কেটের সব কোম্পানি এমনকি ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের বেশকিছু কোম্পানি ওই সময়ের স্পিট সম্পন্ন করে। কিন্তু আইসিবি, বিএসসি ও জনতা ইন্স্যুরেন্স বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে স্পিট করতে পারেনি। অথচ কোম্পানিগুলোর স্পিট করার ঘোষণা দিয়েছিল।
তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৬ অক্টোবর আইসিবি ফেস ভ্যালু ১০০ টাকা থেকে ১০ টাকা ও মার্কেট লট ৫০টি থেকে ৫০০টি করার ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) ১৭ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়। আইসিবির মতো বিএসসি ও জনতা ইন্স্যুরেন্সও একইভাবে ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে প্রতিটি কোম্পানির অভিন্ন ফেস ভ্যালু হওয়ার পর ১ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে কোম্পানিগুলো স্পিট করতে পারেনি বলে জানিয়ে দেয়। অথচ এ ফেস ভ্যালু পরিবর্তনের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কারসাজি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছিল বলে বহুল আলোচিত তদন্ত প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়। উল্লেখিত তিন কোম্পানির ফেস ভ্যালু পরিবর্তনের ঘোষণায়ও শেয়ার দরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।
তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, পুঁজিবাজারের ইতিহাসে যতরকম কারসাজি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো ফেস ভ্যালু পরিবর্তন ইস্যু। ফেস ভ্যালু পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বাড়ানো হয়। শেয়ার মূল্য বিভাজনের কারণে কোনো কোনো ট্রেডার নিজেদের মধ্যে বাল্ক ট্রানজেকশনের মাধ্যমে অতি সহজেই কৃত্রিমভাবে মূল্য বাড়িয়ে ফেলেন। ফলে শেয়ারের বাজার মূল্য বেড়ে যায় ও সে সুযোগে কারসাজির হোতারা শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে আসেন।
এ ক্ষেত্রে কোম্পানির পরিচালকদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে ১০০ টাকার শেয়ার ১০ টাকায় নামিয়ে এনে দর বাড়ানো হয়। ১০০ টাকার শেয়ার ২ হাজার টাকা হলে অতিমূল্যায়িত মনে হয়। কিন্তু ওই শেয়ার ১০ টাকায় নামিয়ে আনলে ২০০ টাকা হলে অতিমূল্যায়ন বলে মনে হয় না। এভাবে সিন্ডিকেট করে দর বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। এ কারণে প্রতিটি কোম্পানির ফেস ভ্যালু অভিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা।