সিনিয়র রিপোর্টার : বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ গুটিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ইলেট্রনিক পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার বাংলাদেশের মূল উদ্যোক্তা রিটেইল হোল্ডিংস এনভি। এমন গুজবে-গুঞ্জনে রোববার রাজধানীর অফিসপাড়ার বাতাস ভারী ওঠে।
এমন ‘গুঞ্জন তাদের কানেও এসেছে’ বলে সিঙ্গার বাংলাদেশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন। তবে বিষয়টির সত্যতা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ৪ নভেম্বর অর্থাৎ ৮ বছর আগে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক রিটেইল হোল্ডিংস ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ৫৫ শতাংশ বেক্সিমকো, পিএইচপিসহ একাধিক কোম্পানির একটি জোটের কাছে বিক্রি করে দিতে চুক্তি করে। এর একমাস পরই দেশের শেয়ারবাজারে ধস নামলে চুক্তি থেকে সরে আসে উভয়পক্ষ।
তবে এবার বাংলাদেশের নয়, তুরস্কভিত্তিক আর্কেলিক এএস কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশের মূল মালিকানা নিতে আগ্রহী বলে শোনা যাচ্ছে। আর্কেলিক এএস ইলেকট্রনিক পণ্যের আরেকটি বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড `বেকো`র মালিক। সিঙ্গার বাংলাদেশও বেকো ব্র্যান্ডের পণ্য এ দেশের বাজারে বিপণন করছে।
তবে এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন সিঙ্গার বাংলাদেশের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, বিদেশি কোনো কোম্পানির সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হলে তা এখনই তাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।
পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনতে প্রায় এক দশক আগেই বিশ্বব্যাপী সিঙ্গারের খুচরা বিক্রির ব্যবসা থেকে সরে আসার পরিকল্পনা করে রিটেইল হোল্ডিংস। গত চার বছরে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ডে নিজের শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকেও বিনিয়োগের একটা অংশ তুলে নিয়েছে কোম্পানিটি। এ সময়ে সিঙ্গার ও এর অন্য সহযোগী কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে সাকল্যে ১৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলার আয় করেছে।
২০১৬ সালে সিঙ্গার পাকিস্তান থেকে ৭০ দশমিক ৩০ শতাংশের পুরোটা বিক্রি করে দেয় রিটেইল হোল্ডিংস। এর আগে ২০১৫ সালে সিঙ্গার থাইল্যান্ডের ৪০ শতাংশের পুরোটা ও ২০১৭ সালে সিঙ্গার শ্রীলংকা থেকে ৬১ দশমিক ৭০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছে কোম্পানিটি। অবশ্য এখনও শ্রীলংকার কোম্পানিতে সাড়ে ৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
বর্তমানে সিঙ্গার বাংলাদেশের পরিশোধিত মূলধন ৭৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৮ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছে। এ থেকে কোম্পানিটি আয় করেছে দুই কোটি দুই লাখ ৭০ হাজার ডলার (বাংলাদেশ মুদ্রায় ২২৮ কোটি টাকা)।
সর্বশেষ বাজারদরের হিসাবে সিঙ্গার বাংলাদেশের বাজার মূলধন এক হাজার ৪৪৭ কোটি টাকার বেশি। এতে রিটেইল হোল্ডিংসের অংশ ৮২৫ কোটি টাকা বা প্রায় পৌনে ১০ কোটি ডলার। তবে মালিকানার ৫৭ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশ ব্লক শেয়ার, যা এখনই বিক্রি করতে পারবে না কোম্পানিটি।
মালিকানার সিংহভাগ ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করলেও এদেশে সিঙ্গার বাংলাদেশের ব্যবসা বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারের সিঙ্গার অবস্থানে শীর্ষে। পাঁচ বছর আগেও যেখানে কোম্পানিটির বছরে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ছিল ৩৮ কোটি, গত বছর তা প্রায় ৭৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
১৮৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত সেলাই মেশিনের বিখ্যাত ব্র্যান্ড সিঙ্গার অবিভক্ত ভারতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে ১৯০৫ সালে। বাংলাদেশে নিবন্ধন নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১৯৭৯ সাল থেকে এবং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৩ সালে।