শ্যামল রায়ঃ রিপন খান একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। প্রায় ১২ বছরের অধিককাল শেয়ার ব্যবসার সাথে জড়িত। বর্তমানে ট্রেড করছেন এন এল আই সিকিউরিটিজে। এ ব্যবসার হাতে খড়ি হয় তার বাবার হাত ধরেই। কারণ তার বাবা একজন রীতিমত শেয়ার ব্যবসায়ী।
রিপন জানালেন প্রথম দিকে বাবাই শেয়ার বাজারের বিভিন্ন কায়দা কানুন গুলো জানিয়ে দিতেন। এখন আমি নিজে দুটো পোর্টফলিও মেইনটেইন করি। যে কোন ব্যবসায় লাভ ও লস মুদ্রার এপিট ওপিট। তবে টেকনিক বুঝে ব্যবসা করলে লাভ করা যায়। সম্প্রতি স্টক বাংলাদেশের সাথে এ বিনিয়োগকারী জানালেন শেয়ার বাজার নিয়ে তার ব্যবসা পরিকল্পনার কথা।
প্রথম যেদিনটাই আমি শেয়ার বাজারে একাউন্ট ওপেন করি, সেই সময় আর আজকের দিন দুটি সম্পূর্ন ভিন্ন অনুভূতি আমার কাছে। কারণ প্রথম দিন আমি বাবার পরামর্শেই শেয়ার বাই করেছিলাম। তাই আমার নিজের হয়তো অতটা কর্তৃত্ত্ব ছিলোনা। আস্তে আস্তে নিজে ব্যবসা বোজার চেষ্টা করছি। নিজে নিজেই বাই সেল করাটা শিখেছি। কখন একটা শেয়ারের অভার প্রাইজ থাকে আন্ডার প্রাইজ থাকে এখন বুঝে গেছি। দাম কমলে যে কিনতে হবে, তাও না। একটা শেয়ার কেনার আগে অনেক গুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। রীতিমত গবেষনা করে তার পরে বিনিয়োগ করি আমি।
বাংলাদেশে শেয়ার ব্যবসাকে ক্যারিয়ার হিসাবে নেওয়া যায় কি-না? জানতে চাইলে বলেন উন্নত অনেক দেশেই শেয়ার ব্যবসাকে ক্যারিয়ার হিসাবে নিয়ে নেয়। সেই দেশের শেয়ার বাজার আমাদের দেশের মত এতটা ঝুকিপূর্ন নয়।
পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতেও শেয়ার বাজার এখন অনেক ভালো। অল্প কয়েক বছর আগেও তাদের ১৭/১৮ হাজার কোটি টাকার মার্কেট ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা ৩১ হাজার কোটি টাকার বাজারে পরিনত হয়েছে। তাদের শেয়ার মার্কেট আমাদের মত এতটা ভাইব্রেন্ট নয়।
ওখানে ইমোশন কাজ করে প্রচুর। তাছাড়া মাঝে মাঝেই কিছু গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি গুরুত্বপূর্ন জায়গায় থেকে আজে-বাজে কথা বলে মার্কেটে ভীতি সঞ্চার করে। বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে যায়। সবাই নিজের টাকা বাচানোর চেষ্টা করে। ফলে সেলারের সংখ্যা বেড়ে যায়। মার্কেটে পতন রোধ করা সম্ভব হয় না।
এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষ আবেগী। পুরু সাইকোলোজিকাল টার্মে চলে আমাদের বাজার। একটু কোথাও কোন কিছু হলেই মার্কেটের ভিত নড়ে যায়। কাজেই গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিদের অপ্রয়োজনীয় কথা বলা এবং মতামত দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
এই মূহুর্তে আমার তো মনে হয় বাজারের অবস্থা অত্যন্ত ভালো। বলা যায় এটা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগেরই সময়। এই মূহুর্তে দেখেশুনে বিনেয়োগ করলে অবশ্যই প্রফিট করা সম্ভম। রোজার পরে মার্কেটে আপ ট্রেন্ড ধারা অব্যহত থাকবে। তখন আসলে কোন শেয়ার কেনার সুযোগ থাকবে না।
আমাদের দেশের শেয়ার মার্কেটের আচরণটাই এরকম। এখন কেউ শেয়ার কিনছে না। সবাই অবজার্ভ করছে। আবার যখন মার্কেট আপ ট্রেন্ডে চলে যাবে তখন কেনার ধুম পরে যাবে। এই দেখুন না কিছুদিন আগেও ২০০০/২১০০ শত কোটি টাকার ট্রেড হতো এখন সেটা ৪০০/৫০০ কোটি টাকায় দাড়িয়েছে। তাহলে মাঝখানের এই টাকাগুলো গেল কোথায়।
এগুলোকি অন্য মার্কেটে চলে গেছে। কিংবা বিনিয়োগকারীরা কী ব্যবসা বন্ধ করে বসে আছে। মোটেও না। বরং আরও বেশি টাকার ট্রেড হওয়ার কথা ছিলো। সরকারী চাকরীজীবিদের বেতন বেড়েছে। ব্যাংকে সুদের হার কমেছে। বন্ডের মধ্যেও ঝামেলা চলছে। কাজেই বাজারে মানি ফ্লো বেড়ে যাওয়ার কথা। আসলে বিনিয়োগকারীরা এই মূহুর্তে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। আর যারা শেয়ার মার্কেটে একবার ঢুকে যায় তারা কখনো বেড় হয়ে যায় না। এমনকি লস হলেও না। হয়তো অপেক্ষা করে কাজেই সামনে আমাদের বাজার অবশ্যই ভালো হবে। এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়।