সিনিয়র রিপোর্টার : প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) নির্ভর পুঁজিবাজার। দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার লেনদেনের প্রথম দিনে থাকে বেশ চমক! বিনিয়োগকারীদের হতাশা এবং উচ্ছ্বাস মিলে প্রথম দিনে স্টক এক্সচেঞ্জের মোট লেনদেনের (টাকা) এক তৃতীয়াংশ লেনদেন হয়।
আইপিও শেষে ধারবাহিকভাবে কমতে থাকে কোম্পানির শেয়ার দর, শেয়ার হস্তান্তর ও ইপিএস মিলে সব। তবে প্রথম দিনে শেয়ার লেনদেন অনেক বাড়ে। বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে দেশের শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক এএফসি ক্যাপিটেল লিমিটেডের সিইও মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, এতে বোঝা যায় এখনো মানুষের আইপিওতে আগ্রহ আছে, তারা আইপিও করছে।
‘কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের প্রথম দিনে শেয়ার হস্তান্তরের পরিমাণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। মানুষের আগ্রহ থাকার কারণে তা হচ্ছে। একারণে পুঁজিবাজারে আইপিওর হার বাড়াতে হবে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় পুঁজিবাজারে আইপিওভুক্তির পরিমাণ অনেক কমেছে। এই হার আমাদের আরো বাড়ানো দরকার।’
স্টক বাংলাদেশকে সম্প্রতি তার অফিসে তিনি বলেন, তবে আইপিওতে যেসব কোম্পানি আসছে বা আসবে, তাদের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। আমরা যা চাচ্ছি, হাজারো যাচাই করেও তা পাচ্ছি না, হয়ত কিছুটা পাচ্ছি। এরপরেও আমাদের আইপিও বাড়াতে হবে।
তুলনামূলক পরিসংখ্যান উল্লেখ করে মজুমদার বলেন, ২০১৫ সালে আগের বছরের তুলনায় অনেক কম আইপিও এসেছে। এটা আরো বাড়ানো উচিৎ। তাহলে মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
গত বছরের তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির শেয়ার দর ইস্যু মূল্যের নিচে। কোনটার দর খুব কাছাকাছি, বেশিরভাগ কোম্পানি আইপিওতে অনেক বেশি প্রিমিয়াম নিয়ে বাজারে যুক্ত হয়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ার ধরে রেখে অনেক বিনিয়োগকারী হায় হায় করছেন। যেমন- সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়েস্টার্ন মেরিন, ফ্যামিলিটেক্স, পেনিনসুলা কোম্পানি।
আইপিও এবং শেয়ার ধারণ সম্পর্কে মজুমদার বলেন, আইপিওতে এলেই সব কোম্পানি ভালো হবে, তা নয়। আমাদের দেখে-শুনে এ ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগ শুধু ইপিএস-ন্যাভ দেখে নয়, কোম্পানির পরিচালকদের দক্ষতাও দেখা দরকার।
‘এজন্য সবচেয়ে ভালো হবে আপনি যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন, আপনার বা আপনার বাবার পেনশনের টাকাটা কোন কোম্পানির হাতে দিচ্ছেন? একবার সেই কোম্পানিটা দেখে আসুন। তার অন্তত অফিসটা আছে কিনা, নিশ্চিত হোন। আপনার দেয়া অর্থ আপনাকে তার ফেরত দেয়ার সক্ষমতা তার আছে কিনা, নিজে দেখে আসুন।’
‘আপনি যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন, সেটি আপনার থেকে খুব বেশি দুরে নয়। শুধু কোম্পানির ইপিএস-ন্যাভ দেখে বিনিয়োগ নয়। কোম্পানির কর্তা এবং প্রশাসনিক কর্তাদেরও একবার দেখুন। এতে আপনার অন্তত মুলধন হারাবে না।’
মাহবুব বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নতুন আইপিও দেয়ার জন্য বসে আছে। আমরা তাকে মান-সম্মত কোম্পানি এতে দিতে পারছি না। এখনো মানুষের অনেক আগ্রহ আছে; তারা আইপিও করছে। যে কারণে শেয়ার লেনদেনের প্রথমদিনে লেনদেনের পরিমাণও বাড়ছে। তবে আশঙ্কাও আছে, প্রথম দিনে বিক্রয় চাপ। এটা কি আগ্রহ থেকে, না অন্য কিছু। তা হলো- ভয়।
আন্ডার প্রাইস। ফান্ডামেন্টাল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করুণ। সে ভয় থাকবে না।
আইপিও নির্ভর পুঁজিবাজার পৃথিবীর সব স্থানে রয়েছে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ কমায় আইপিও প্রদান বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আর বাংলাদেশে বৈচিত্র্য। আইপিও না বাড়িয়ে তা কমানো হয় বলেন মাহবুব।