কিনুন, যখন শেয়ার মার্কেটে রক্তক্ষরণ হয়। যদি তা আপনার নিজের রক্তও হয়, তবুও কিনুন (Buy when there’s blood in the streets, even if the blood is your own — Baron Rothschild).
শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ নিয়ে বিখ্যাত এ উক্তিটি করেছিলেন বেরন রুথসিল্ড। আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে করেন। মার্কেটে যখন পেনিক সেল শুরু হয়, তখন খারাপ-ভাল নির্বিশেষে সব শেয়ারই মূল্য হারায়। সর্বগ্রাসী পতনে কোম্পানির দূর্বল ফান্ডামেন্টালের দায় যতটা, তার চাইতে ঢের বেশী দায় থাকে অনেক বিনিয়োগকারীর পলায়নপর মানসিকতায়।
পেনিক এতটাই চরম আকার ধারণ করে যে, আমজনতা অতি সাধারণ বিনিয়োগ নিয়মনীতি যায়, অনেকে ভুল করে তার হাতে থাকা ভাল শেয়ারটা পর্যন্ত পানির দরে ছেড়ে দিয়ে মার্কেট আউট হন। কারণ, তাদের ভয়।
মার্কেটে যখন ধংসযজ্ঞ চলতে থাকে; তখনই কিছু কোম্পানির শেয়ারে দারুন কিছু সুযোগ সৃষ্টি হয়। অভিজ্ঞ ও কুশলী বিনিয়োগকারীরা কোনভাবেই এ সুযোগগুলো হাত ছাড়া করেন না। তারা সুযোগ সন্ধান করে তা লুফে নেয়।
দাম কমেছে বলে তারা সেই শেয়ার কেনেন- এ ধারণা মূলত ঠিক নয়। তাদের দৃষ্টি থাকে- মূল্য নয়; মানের দিকে। বাজে শেয়ার যত কম দামেই হোক তা বর্জনীয়। এগুলো সল্প সময়ে মুনাফা দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের জন্যে একেবারে অনুপযোগী।
তাই মানসম্পন্ন এবং ফান্ডামেন্টাল থাকা সত্ত্বেও পেনিক সেলের কারণে মূল্য হারায় অনেক ভাল কোম্পানি। সে সব কোম্পানির শেয়ারগুলোকে টার্গেট করেন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা।
তারা অনুসরণ করেন- শত বছর আগের বেরন রুথসিল্ডের সেই অমর উক্তিটি- ‘কিনুন যখন মার্কেটের রক্তক্ষরণ হয়, যদি তা আপনার নিজের রক্ত হয়, তবুও কিনুন’।
ঈদুল আযহা পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজারের অধিকাংশ দিনই সূচক ছিল নিম্নমুখী। সূচকের সঙ্গে মোট লেনদেন নেমে আসে ৩শ’ কোটির ঘরে। গত দুই মাসে সূচক কমেছে প্রায় ১৮০পয়েন্ট আর বাজার মূলধন হারিয়েছে ১০হাজার কোটি টাকা! আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও থেকে কর্পুরের মত মিলিয়ে গেছে শরীরের রক্ত সমতুল্য অনেক পূঁজি।
নিজের হাতে থাকা শেয়ারগুলোর মূল্য পতনেও যারা ধৈর্য্য ধারণ করেছিলেন এবং নতুন পূঁজি যোগ করে ভাল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন তারা নিশ্চয় ভালো কিছু পাবেন। মার্কেট ধীরে হলেও ফিরে আসছে।
তবে মার্কেট পূর্ণরুপে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি-না, তা বলা মুশকিল। বাজারের টার্নওভার ৫শ’ কোটির ঘর না ছাড়ালে কিছুই নিশ্চিত করে বলা যায় না।
গত দুমাসে পোর্টফলিওতে থাকা শেয়ারগুলোর অন্তত ২০% মূল্য হারিয়েছেন। নতুন পূঁজি যোগ করে শেয়ার কিনুন দুহাত ভরে। বাজার যেখানেই যাক; ফল দেবে।
কারণ, শেয়ারের দাম দেখে নয় বরং কোম্পানির আর্থিক সামর্থ দেখে বিনিয়োগ করুন। ইনশাল্লাহ্, ভবিষ্যতে এ থেকেই ভাল মুনাফা মিলবে।
তবে অনেকেই ইংরেজিতে ক্রেজিভাবে বলেন- No risk no gain. এখানে মূল বক্তব্য হলো- বোকা হয়ে ভুল মার্কেটে চড়া মূল্যে শেয়ার কিনে সাহস না দেখিয়ে, বেয়ার মার্কেটে কম দামে ভাল শেয়ার কিনে সাহস দেখানই যৌক্তিক।
- মোহাম্মদ হাসান শাহারিয়ার
যদি বিনিয়োগের জন্য মূলধন না থাকে, তা’হলে শেষ সম্বল ঘটি,বাটি ও কম্বল বিক্রয় করে কিনুন। আর রাস্তায় গিয়ে বসবাস করুন। হাতীর মত বার বছর পর বাচ্ছা দেবে- সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনুতে থাকুন।
ভাই Stock Market এর বাংলা অর্থ হল পুঁজি বাজার। এখানে তারাই বিনিয়োগ করবে যারা নিজেদের জীবনযাপনের খরচ বহন করেও অতিরিক্ত পুঁজি বা সঞ্চয় যোগান দিতে সক্ষম। তাই শেষ সম্বল ঘটি,বাটি ও কম্বল বিক্রয় অথবা ধার করে বিনিয়োগ করার যায়গা শেয়ার মার্কেট নয়।
আপনি আইপিও তে যে টাকা কোম্পানিকে দিয়েছেন তা দিয়ে মালিক পক্ষ মিল ফ্যাক্টরি বড় করে ব্যবসা বাড়াবে, মুনাফা বারারে। এর পর আপনি ঐ আয়ের ভাগ পাবেন। চাইলেই এই কাজ ৩-৫-৭ দিনে করা সম্ভব নয়। এর জন্য সময় লাগে, আমাদের দেশের হিসেবে ১-২ বছর। কিন্তু আপনি একটি শেয়ার কিনেই ৩-৫ দিনের মাথায় লাভ খোঁজেন। এই চিন্তা করলে আর যাই হোক ব্যবসা করা সম্ভব নয়। আর আমাদের লাভের প্রত্যাশাও অনেক বেশী। একটি ভাল কোম্পানি (যেমন স্কয়ার) যেখানে ১ বছরে ১৫-১৭% লাভ করে সেখানে স্টক মার্কেট থেকে আমরা ১ মাসেই ২০-৩০-৫০% লাভ আশা করি।
লাভজনক ব্যবসা ও ভাল মালিক পক্ষ এগুল দেখে শেয়ার কিনুন। দেখবেন বেশী দামে বেচে লাভ করতে না পারলেও ক্ষতি নেই। কোম্পানি প্রদত্ত বোনাস থেকে আপনার আয় মন্দ হবে না বরং ব্যংকে ফিক্সড ডিপোজিট এর চাইতে আপনার লাভ বেশী হবে।
আপনার মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ। পত্রিকায় দেখেছি ২০০৭ ও ২০১০ সালে পুঁজি বাজারে বিনিয়োগ করে অনেকে ফকির হয়েছে। কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছে। বিনিয়োগকারীরা মানব বন্ধন, মিছিল, সভা ও ঘেরাও কর্মসূচী দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিও কোটা রাখা হয়েছে ও ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনার বক্তব্য যদি সঠিক হয়ে থাকে। তা’ হলে এতো দরকার ছিল না।
পুঁজি বাজারে বিনিয়োগ করে অল্প সময়ে কেহই বেশী লাভবান হতে পারে না। কারসাজিকারীরা পুঁজি বাজার অস্থির করে লাভবান হয়। ক্ষতিগ্রস্থ হয় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগণ। দু একটা কোম্পানী দিয়ে সব কিছু বিচার করা যায় না। গত জানুয়ারী ২০১৪ থেকে আজ পর্যন্ত শেয়ার বজারের অবস্থা ভাল নয়।
আমি শেয়ার বাজারে আছি ২০০৭ থেকে। সবাই শুধু ২০১০-১১ এর মহা পতনকেই মনে রেখেছে কিন্তু ভুলে গেলে ২০০৮ থেকে নভেম্বর, ২০১০ এর সময় টুকু। মইনুদ্দিন-ফকরুদ্দিন সরকারের ভয়ে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা দামী দামী গাড়ি রাস্তায় ফেলে সব পালাল। দেশের ব্যাবসা বাণিজ্য প্রায় বন্ধ। ব্যাবসায়িক মন্দায় পুঁজিপতিরা ব্যবসা ফেলে তাদের টাকা নিয়া আসল শেয়ার বাজারে। ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে নয়া পেরে ব্যাংক গুলোও তাদের বড় পূঁজি নিয়ে বাজারে হাজির হল। শুরু হল সুচকের এক টানা উত্থান।
খারাপ –ভাল সব শেয়ারের দামই বাড়তে লাগল। যা কেনে তাতেই লাভ পেয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তাদের লোভ সামলাতে পাড়লনা। প্রথমে তাঁরা তাদের সব পূঁজি বিনিয়োগ করল। এর পর ব্যাক্তি পর্যায়ে ধারদেনা করে অথবা জমি-জমা বেঁচে সেই টাকা বাজারে নিয়ে এল। তাঁরা সব চেয়ে বড় ভুল করল মার্চেন্ট ব্যাংকের পাল্লায় পড়ে। উচ্চ সুদে ১ঃ২ হারে মার্জিন ঋণ নিয়ে। যার ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ ছিল সে ১৮২০% সুদে আরও ২ লক্ষ টাকা ঋণ পেল। ফলাফল প্রায় প্রতি দিনই বাজারে টার্নওভারের রেকর্ড হতে লাগল। ২০০৭ এ যে শেয়ার ২৫-৩০ টাকা ছিল, ২০০৯ এ তা ৬০-৭০ টাকা হয়ে গেল।
বাজার এতটাই বেড়ে ছিল যে, আমার মত ২ বছরের নবীন বিনিয়োগকারীও দেড় বছরেই পুজি দুই গুন করে নিয়েছিল। ২০১০ এর শুরুতে লাভগুল ধীরে ধীরে তুলে নেই। সব চেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত ছিল মার্জিন লোনের ফাদে পা না দেয়া। বেছে বেছে বাজারের সব চেয়ে ভাল ফান্ডামেন্টাল স্টকগুলো কেনার পরেও ডিসেম্বর,২০১০ থেকে ফেব্রুয়ারী,২০১১ এই তিন মাসেই বিনিয়োগের ৫০% নাই হয়ে গেল। যারা মার্জিন ঋণ নিয়েছিল সব চেয়ে বিপদে পড়ল তাঁরাই । এক দিকে শেয়ারের দাম পড়ে গেল অন্য দিকে সুদ বাড়তে লাগল লাগাম ছাড়া। প্রথমেই কিছু লোক ফোর্সড সেলের স্বীকার হয়ে সর্ব শান্ত হল। পড়ে ফোর্সড সেল যখন বন্ধ হলেও উচ্চ সুদ আর নিম্ন শেয়ার মূল্য মিলিয়ে মার্জিন পোর্টফলিও গুল নেগেটিভ ইকুইটি হয়ে চলে গেল মার্চেন্ট ব্যাংকের জিম্মায়। ফল – মার্জিন ঋণধারী প্রায় সবাই ফতুর।
যেহেতু আমার সবটাই নিজের পূঁজি, তাই টাকার প্রয়োজনে কোন শেয়ার বিক্রি করতে হয়নি। আর শেয়ার বাজারই আমার এক মাত্র আয়ের উৎস নয়। তাই চাকরীর টাকার জীবন ধারন করে যা বেচে যেত সেই ছোট ছোট সঞ্চয় দিয়ে নিজের পোর্টফলিওতে থাকা শেয়ারগুল এভারেজ করতে থাকলাম। আবার বছর বছর দেয়া ষ্টক ডিভিডেন্ডগুলো ও নিতে থাকলাম। ২০১১ এর মার্চ থেকে ২০১৩ এর জুন , মাত্র ২৭ মাসেই সেই হারানো ৫০% পূঁজি বাজার থেকে তুলতে পেরেছি। সময় আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, তাই ২০১৪, ২০১৫ এই ২ বছরে বাজারের মন্দা ভাব না কাটলেও আমার মুনাফায় ভাটা পড়েনি। ২০১৪ সালে ১৪% আর এই বছর এখন পর্যন্ত ৬.৮% মুনাফা করেছি। এই মুনাফার একটাই কারন – আমি ক্যাপিটাল গেইন নয় বরং ভাল কোম্পানিগুলর দেয়া ক্যাশ/স্টক টার্গেট করেছি। ক্যাপিটাল গেইন তাই আমার জন্য বোনাস বিশেষ করে খারাপ মার্কেটে।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য শিক্ষনীয়ঃ
১। শেয়ার বাজার কখনই আপনার আয়ের প্রধান উৎস হবে না। চাকরী-ব্যবসার পাশাপাশি ২য় আয়ের মাধ্যম হল পূঁজি বাজার।
২। আপনার ছোট ছোট সঞ্চয়গুল ধীরে ধীরে পূঁজি বাজারে বিনিয়োগ করুন। অনেকটা ব্যাংক ডিপিএস এর মত করে।
৩। শুধুমাত্র নিজের পূঁজি বিনিয়োগ করুন। ঋণের টাকা কখনই পূঁজি বাজারে আনবেন না।
৪। নিয়মিত ডিভিডেন্ড দেয়া ভাল কোম্পানিতে ধীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগ করুন।
৫। বাজার থেকে ক্যাপিটাল গেইন অর্জন সম্ভব না হলে ডিভিডেন্ড টার্গেট করুন। পতনশীল বাজারে ডিভিডেন্ডই আপনার মুনাফার প্রধান অবলম্বন।
আপনার অভিজ্ঞতা বিনিময় ও মূল্যবান পরামর্শর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি আশা করি আপনার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ নতুন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়ক হবে।
নতুন কোম্পানী যখন বাজারে আসে তখন সে সুস্বাস্থ্য নিয়ে আসে, ইপিএস ও পিই রেশিও ও ন্যাভ মানসম্মত থাকে। কিছুদিন পরে কোম্পানী স্বাস্থ্য ধরে রাখতে পারে না স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগতে থাকে। এই বিষয়গুিল বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারে। নতুনদের জন্য বুঝা মুশকিল। নতুন বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য ভাল কোম্পানীর মানসম্মত একটি বিনিয়োগ টুলস চার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত লিখলে, নতুনদের জন্য উপকারে আসবে।
Nice. Thanks. Pl ur phone number.
Bhalo share r kharap share er bebodhan akhon are bojha Jay na.
রক্তক্ষরণ এর জন্য দায়ী এই রক্ত পিপাসু………………
রক্তক্ষরণ এর জন্য দায়ী কে………….??
কার কম্বল কে চুরি করে বিক্রয় করে???????
ধন্যবাদ হাসান ভাই, এতো দূর্যোগের মাঝে আপনার লেখা বুকে অনেক সাহস যোগায়।মার্কেট থেকে পালাবো ভেবেছিলাম, কিন্ত আপনার এই লেখা পড়ে সাহস পেলাম।
হাসান ভাই অাপনার লেখা ভাল, লেগেছে।তবে ভাই দেয়ালে পিঠ লেগে গেলে পালানো ছাড়া উপায় নাই।
Respected editor bhai. Blood dei abar taka dei blood ferot pawer asay. Kinto bar bar blood shunna hoye jaschi. market e bakaron mana hoche na. Karon sharishar maje boot bhai
Rabis, Bogus, no coments, Fotkabaz
ASOLE BOKTOBO SHOBAI THITE PARE KINTO PUNARAY BINIUGER TAKA PABO KOTHAY BHAI?SHAY BOKTOBOTA EKTO DITA PARBEN KAU?
Apatoto biniyog na kore taka cash rakhun. valo folafol paben inshallah.
Eto kisu..
ভাল কোম্পানি চেনার উপায় কি? বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে যদি কিছু বলতেন………..
আচ্ছা আপনারা যারা মুনাফার চাইতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বা মূলধন টাই হারিয়েছেন তারা কি দু একটা কোম্পানীর শেয়ার ক্রয় করে ব্যাবসা করেছেন নাকি মোটামুটি কয়েকটা কোম্পানির শেয়ার ছিল।
আচ্ছা আপনারা যারা মুনাফার চাইতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বা মূলধন টাই হারিয়েছেন তারা কি দু একটা কোম্পানীর শেয়ার ক্রয় করে ব্যাবসা করেছেন নাকি মোটামুটি কয়েকটা কোম্পানির শেয়ার ছিল।