শাহীনুর ইসলাম : মহা-সংকটে থেকেও ‘শেয়ার দর উত্থান হবে’ গুজব ছড়িয়ে পড়েছে এমারেল্ড অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের। উৎপাদন বন্ধ কোম্পানির বেশিরভাগ শ্রমিক ব্যাধতামূলক ছুটিতে রয়েছে। ১৩০ কোটি টাকা ঋণ মাথায় নিয়ে শেয়ার দরে উত্থান বা এই মুহূর্তে সম্ভাবনার সব কথা ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে (ফেসবুক) কয়েকটি বেশ গ্রুপ এমারেল্ড অয়েল কোম্পানির সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য চালিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানির দায়িত্বশীল কোন ব্যক্তির বক্তব্য ছাড়াই এসব চলছে। এমারেল্ড ওয়েলের সম্ভাবনা বেশ ভালো এবং কোম্পানির হাত বদলের বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করে গুজব-গুঞ্জন ছাড়ানো হচ্ছে চারদিকে। সম্ভাবনার এমন কথা সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে মনে করে কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
গুজবের সত্যতা নিশ্চিত করতে সোমবার সকালে কথা হয় এমারেল্ড অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক স্বজন কুমার বসাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাত বদলের চেষ্টা ছিল, তবে তা আর হয়নি। তবে এই মুহূর্তে কোন সম্ভাবনাও নেই।
নতুন ভবনে কোম্পানির অফিস স্থানান্তর করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু কোম্পানির আয় নেই, তাই বিশাল ব্যয়ের অফিস খরচ বহন করা অনেক আমাদের জন্য কষ্টের। তাই স্বল্প পরিসরে নতুন অফিস নেয়া হয়েছে।
এমারেল্ড অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ঋণ অনাদায়ী পড়েছে। যে কারণে কোম্পানির বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনা ঋণ আদায়ের চেষ্টা করছে কয়েকটি ব্যাংক। একই সঙ্গে মূলধন ঘাটতির কারণে স্পন্দন ব্র্যান্ডের রাইস ব্রান তেল উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় ব্যবসায়িক কার্যক্রমও স্থগিত রয়েছে।
কোম্পানিটির মূল উদ্যোক্তা ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুল গণি গালিব ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দুদকের মামলায় গ্রেফতারের পর সংকটের শুরু। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন বলে কোম্পানির বিশেষ সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ও বেতন অনিশ্চিত হওয়ায় চাকরি ছেড়েছেন অনেক কর্মচারী।
রাজধানীর বিজয়নগরে নেয়া নতুন অফিস চলছে তিন সদস্য দিয়ে কোনমতে। কোম্পানির বিভিন্ন কাগজপত্র সামাল দেয়া এবং নিরাপত্তার কারণে তাদের রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদের দেয়া হয়েছে বাধ্যতামূলকভাবে ছুটি ।
কোম্পানির দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্পর্কে আরো জানতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসানুল হক তুষারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে কোম্পানির সেক্রেটারি মেহেরুন রোজী বলেন, এখনো চেষ্টা চলছে। নতুন ম্যানেজমেন্ট আসবে বলে আশা করছি।
তবে তিনিও গত বছরের জুন মাসে কোম্পানি থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে আছেন। বিশেষ প্রয়োজনে অফিসে আসেন, তাছাড়া আর আগের মতো তিনি নিয়মিত নন। বিশেষ সম্ভাবনার অপেক্ষা করছেন তারা। তবে কবে নাগাদ সেই বিশেষ সময় আসবে তা তিনি জানাতে পারেননি।
এদিকে খেলাপি ঋণ আদায়ে গত ডিসেম্বরে কোম্পানির জমিসহ কারখানা বিক্রি করতে নিলাম ডাকে বেসিক ব্যাংক। তবে প্রথম দফায় নির্ধারিত সময়ে কেউ নিলামে অংশ নেয়নি। দ্বিতীয় দফায় চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে জানতে কোম্পানির লিগ্যাল এডভাইজার আবদুল হাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।

শেরপুর সদরে কোম্পানিটির কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নিরাপত্তারক্ষী এবং কারখানা সংলগ্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, অন্তত গত দুই বছর ধরে রাইস ব্রান অয়েল প্রস্তুতকারী কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ আছে। শেরপুরের সাংবাদিক দেবাশীষ ভট্টাচার্য সরেজমিন পরিদর্শন করে জানান, কার্যক্রম না থাকায় কারখানার অভ্যন্তরে ঘাস গজিয়েছে।
কারখানার দীর্ঘদিনে নিরাপত্তরক্ষী ফজলুল হক জানান, কারখানাটি প্রায় আড়াই বছর ধরে বন্ধ। কয়েক মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তিনি। কারখানার মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আজাদ উৎপাদন বন্ধ থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি সম্পর্কে সাবেক এমডির মামা।
সৈয়দ আজাদ বলেন, সম্পর্কে মামা হলেও আমি ওই মিলের বেতনভোগী কর্মচারী। গালিবের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হওয়ার পর তিনি আত্মগোপনে। তার ঢাকার বাড়ি, শেরপুরের মিলসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আছে। শুনেছি, কিছুদিনের মধ্যে ঋণ করে পুনরায় মিল চালু করবে।
কোম্পানিটি সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে ১৪২ কোটি টাকারও বেশি পণ্য বিক্রি করেছে। এতে ১৮ কোটি টাকা নিট মুনাফা হয়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ সমাপ্ত অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে ৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। নিট মুনাফা হয়েছে ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
মিল সংলগ্ন চায়ের দোকানি তাজুল শেখ বলেন, অন্তত দেড় বছর ধইরা মিল বন্ধ রইছে। শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, কাঁচামাল সরবরাহের বিপরীতে এমারেল্ডের কাছে তিনি প্রায় দেড় কোটি টাকা পান।
কুঁড়া ব্যবসায়ী ইন্দ্রজিৎ চাকী বলেন, স্পন্দনের কাছে তার পাওনা প্রায় ২২ লাখ টাকা। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে মিল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও টাকা না পাওয়ায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। আরেক ব্যবসায়ী মাধাই সাহা বলেন, দুই বছর আগে কুঁড়া বিক্রির ২০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। মালিক ও জিএম দু’জনের ফোন বন্ধ, মিলেও দেড় বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ। খুব দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
বেসিক ব্যাংকের আইন বিভাগের কর্মকর্তা জাহিদ জানিয়েছেন, নিলাম স্থগিত করে কোনো রিট হয়েছে বলে তারা জানেন না। ব্যাংকটির দিলকুশা শাখার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, রিটের কথা শুনেছেন। লিখিত কোনো চিঠি পাননি। এদিকে নির্ধারিত সময়ে কেউ নিলামে অংশ নিতে দরপত্র জমা দেয়নি বলেও জানান তিনি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এখন কোম্পানিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা নতুন বিনিয়োগকারী খুঁজছেন। ব্যাংকের সঙ্গে নতুন সমঝোতায় যেতে আগ্রহী। ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এমারেল্ড অয়েল ঋণের অর্থ পরিশোধে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব নিয়ে এলে তা বিবেচনা করা হবে। তবে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রস্তাব না আনলে অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে কোম্পানিটির বন্ধকিকৃত সম্পত্তি জিম্মায় নেবে ব্যাংক।
এমারেল্ড অয়েলের মূল উদ্যোক্তা ও সাবেক এমডি গালিব কোম্পানিটির কারখানাসহ স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। এ ঋণে অনিয়মের অভিযোগ এবং ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় দুদকের মামলার আসামি ও গ্রেফতার হন। পরে জামিনে মুক্ত হন।
২০১৪ সালে আইপিও প্রক্রিয়ায় ২০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এমারেল্ড অয়েল।
Emerald oil keno,mithun knitting,RN ,bsc sob share i bambo diache.sob loss 25 lak taka loss dia bikri kore diachi.sob ses.
Emerald oil kena 56 tk,RN kena 55 tk,mithun 62 tk,sheferd kena 48 tk,makson kena 45 tk,bsc kena 57 tk,ai holo market. Manus keno invest korbe.