সিনিয়র রিপোর্টার : সামষ্টিক অর্থনীতি, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, করপোরেট আয়— কোনো বিবেচনাতেই আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। তবুও শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহে প্রতিদিনই দর হারিয়েছে সিংহভাগ সিকিউরিটিজ। সূচক কমেছে ৩ শতাংশের বেশি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের এক্সপোজার ইস্যুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থানসহ নানা ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেক কমে গেছে। নতুন করে পুঁজি হারানোর ভয় কাজ করছে তাদের মধ্যে।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই নিম্নমুখী আছে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের সব সূচক। তবে গত সপ্তাহে দরপতনের মাত্রা বেড়েছে। পাঁচ কার্যদিবসের লেনদেন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিদিনই সূচক কমেছে। ৫-৭ শতাংশ হারে বাজার মূলধন খুইয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক খাত।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অতীত-বর্তমান অবস্থান নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারো আতঙ্ক কাজ করছে।
অব্যাহত দরপতনের মুখে বুধবার সন্ধ্যায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য সময় বাড়ানো হবে না। তবে এক্সপোজারের সংজ্ঞায় পরিবর্তনসহ অন্যান্য নীতি সহায়তা দেয়া হবে।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বক্তব্য স্পষ্ট নয়। এর মাধ্যমে বাজার কার্যত কী সমর্থন পেতে যাচ্ছে তাও নিশ্চিত নয়। এ পরিস্থিতিতে প্রায় এক বছরের সর্বনিম্নে নেমে আসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। বৃহস্পতিবার সূচক আরো ১ শতাংশ কমে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয় সবই ইতিবাচক প্রবণতায় রয়েছে। সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থাতেই। বিনিয়োগকৃত সম্পদের বাজারদর আগামীতে কেমন থাকবে এ বিষয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ রয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মৌলভিত্তি বিবেচনায় তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিলেও ঝুঁকি প্রশমনে তাদের কেউ কেউ শেয়ার বিক্রি করে থাকেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্য কিছু করলে নীতিনির্ধারকদের ওপর আস্থার জায়গাটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, শেয়ারবাজারে বিক্রয় চাপ রোধে এক্সপোজারের সময় বাড়ানোর চেয়ে তাদের বর্তমান উদ্যোগ বেশি কার্যকরী হবে।
গত সপ্তাহের বাজারচিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইর তিনটি সূচকই ৩ শতাংশের বেশি কমেছে। ব্রড ইনডেক্স ডিএসইএক্স ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে ৪ হাজার ১৯৫ দশমিক ৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ৪ হাজার ৩০০ পয়েন্টের মনস্তাত্ত্বিক স্তরের নিচে নেমে আসার পর অনেক বিনিয়োগকারী আরো দরপতনের আশায় বিক্রয়াদেশ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে ডিএসইর দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৩৫১ কোটি ৪৬ লাখ ৯৬ হাজার ২৯৯ টাকা, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কম। দরপতনের বাজারে লেনদেন বিশেষ না কমার বিষয়টিকে বিশ্লেষকরা বিক্রয়চাপ হিসেবেই দেখছেন।
দেশের আরেক শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) প্রতিদিনই সূচক কমেছে। সপ্তাহ শেষে সিএসসিএক্স ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে ৭ হাজার ৮৫০-এর ঘরে নেমে এসেছে। তুলনামূলক কম কমেছে সেখানকার নির্বাচিত কোম্পানিগুলোর সূচক সিএসই-৩০।
খাতভিত্তিক চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক সপ্তাহে প্রায় ৭ শতাংশ হারে বাজার মূলধন হারিয়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল, জীবন বীমা, বিবিধ, সেবা-আবাসন ও ভ্রমণ অবকাশের মতো খাতগুলো। ব্যাংক, সিমেন্ট, ওষুধ-রসায়নের মতো বড় মূলধনি খাতগুলোও ২-৪ শতাংশ হারে বাজার মূলধন খুইয়েছে।
ডিএসইর সাপ্তাহিক লেনদেনের ২৭ শতাংশ ছিল বিদ্যুত্-জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে ঘিরে। এ খাতের বাজার মূলধনও ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমেছে।
দরবৃদ্ধির সাপ্তাহিক তালিকায় দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সবই ছিল ছোট মূলধনি কোম্পানি। অবশ্য সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধনে ব্লু-চিপ ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অংশ আগের বৃহস্পতিবারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।