তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফল প্রকাশ শুরু হয়েছে। মন্দার বাজারেও তাক লাগানো ফল প্রকাশ করেছে অগ্রণী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস। তুলনামূলক ভাবে টিসিএস খারাপ ফল উপহার দিলেও মনে রাখতে হবে, চেন্নাইয়ের সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের বৃহত্তম এই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ভাল রকম লোকসান হয়েছে। লাভ কমেছে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার-এর। ফল প্রকাশ এখন চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দেখতে হবে এই আপাত মন্দার বাজারেও কোন কোন সংস্থা ভাল ফল উপহার দিচ্ছে।
বস্তুত, লগ্নির জন্য তহবিল নিয়ে বসে আছেন বহু মানুষ। কিন্তু মনমতো লগ্নির জায়গা পাচ্ছেন না। বহু ভাল শেয়ার অনেকটা সস্তা হলেও, আরও নামতে পারে এই ভেবে তা কিনতে পারছেন না। গত ১৫ মাসে এক রকম বাড়েইনি বেশির ভাগ ইকুইটি নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভ। অনেকটা নেমে আসার পরে সোনার দাম আবার একটু ঊর্ধ্বগতি পেয়েছে অনিশ্চয়তার বাজারে।
২ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি পর্যালোচনা করার দিন। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মনে করা হচ্ছে এ বার সুদ কমানো হবে না। বাজারের বর্তমান অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের লগ্নিকারীরা কী কী পদক্ষেপ করতে পারেন তা দেখে নেওয়া যেতে পারে এক নজরে।
১) যাঁরা শেয়ারে লগ্নি করতে চান, তাঁরা তহবিল নিয়ে অপেক্ষা করুন। সাময়িক ভাবে টাকা রাখা যেতে পারে সেভিংস ফান্ড অ্যাকাউন্টে বা লিকুইড ফান্ডে। যে-সব শেয়ার কিনতে চান, তার নীচের দিকের দরের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করুন। দাম সেই অভীষ্ট জায়গায় নামলে তুলে নিন পছন্দের শেয়ার।
এই রকম হতাশাপূর্ণ বাজারে যাঁরা সঠিক সওদা করেন, তাঁরাই দীর্ঘ মেয়াদে বড় দাঁও মারেন। এই বাজারে কেনা যেতে পারে উঁচু ডিভিডেন্ড ইল্ড-যুক্ত শেয়ার, যাতে দাম বাড়তে দেরি হলেও ডিভিডেন্ড বাবদ যেন ন্যূনতম আয় হয়।
২) ফান্ডে লগ্নিকারীরা এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি চালিয়ে যান। ঝুঁকির ব্যাপারে বেশি চিন্তা হলে ব্যালান্সড ফান্ড বা ঋণ-নির্ভর ফান্ডে (ডেট ফান্ড) লগ্নি করতে পারেন। কর সাশ্রয়ের জন্য লগ্নি করতে পারেন ই এল এস এস প্রকল্পে। বর্তমান বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হতে পারে।
৩) প্রবীণ নাগরিকেরা ৯.৩ শতাংশে লগ্নি করতে পারেন ডাকঘরের সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস প্রকল্পে। বড় ব্যাঙ্কগুলিতেও খোলা যায় এই অ্যাকাউন্ট। মেয়াদ ৫ বছর। রাখা যায় সর্বাধিক ১৫ লক্ষ টাকা। উৎসে কর কাটা হয়। সুদ দেওয়া হয় তিন মাস অন্তর।
৪) উঁচু হারে করদাতারা দীর্ঘ মেয়াদে (১৫ বছর) লগ্নি করতে পারেন করমুক্ত বন্ডে। চলতি বছরে এখানে সুদ মিলছে ৭.৬০% থেকে ৭.৭২% পর্যন্ত। বড় মেয়াদে লগ্নি করতে অসুবিধা হলে অম্তত ৩ বছর টাকা রাখতে পরেন ভাল ঋণপত্র-নির্ভর ফান্ডে। এখানে ৭.৫% থেকে ৮% প্রায় করমুক্ত আয় আশা করা যেতে পারে।
৫) ব্যাঙ্কের তুলনায় একটু বেশি সুদে টাকা রাখা যায় ভাল গৃহঋণ
সংস্থাগুলির জমা প্রকল্পে।
৬) বহু ক্ষেত্রে মন্দা চললেও ভারতে গাড়ি বিক্রি বাড়ছে। সুদ এবং পেট্রোলের দাম কমা এর অন্যতম কারণ হতে পারে। চাহিদা বাড়ায় গাড়ি ছাড়াও নজর রাখা যায় এর সহযোগী কিছু শিল্পের শেয়ারে। তেলের দর কমায় লাভের মুখ দেখছে বিমান শিল্পও। পেট্রো-পণ্য সস্তা হওয়ায় উপকৃত হচ্ছে প্ল্যাস্টিক ও রং শিল্প। লগ্নির লক্ষ্যে এই সব শিল্পের অন্তর্গত কিছু সংস্থার শেয়ারে নজর রাখা যায়। চোখ রাখা যেতে পারে বহু দিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা রিল্যায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের উপরেও। সম্প্রতি প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে এই হেভিওয়েট শেয়ার।
৭) পুরনো লগ্নিকারীরা বর্তমান বাজারের সুযোগ নিয়ে নিজের পোর্টফোলিও ঢেলে সাজার কথা ভাবতে পারেন। অর্থাৎ লগ্নি সরিয়ে নিতে পারেন শুধু সম্ভাবনাময় ভাল শেয়ারে— বাজার উঠতে শুরু করলে যে-সব শেয়ার দ্রুত ঊর্ধ্বগতি পাবে।
৮) ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে কোম্পানি ফলাফল প্রকাশ। ২ ফেব্রুয়ারি ঋণনীতির পর্যালোচনা। একই মাসের শেষ দিনে (২৯ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ। অর্থাৎ বেশ ভাল রকম উত্তেজনা থাকবে নুয়ে পড়া বাজারেও। সজাগ থাকতে হবে লগ্নিকারীদের।
- অমিতাভ গুহ সরকার, কলকাতা, ভারত
This article may applicable for India … Not for Bangladesh