চট্টগ্রাম অফিস : দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র করে দেশের প্রখ্যাত ওষুধ কোম্পানি গ্লাস্কোস্মিথক্লাইন-জিএসকের কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অভিযোগ করেছেন কারখানাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, মানসম্পন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানাটি সাধারণ মানুষের কাছে কম দামে ওষুধ সরবরাহ করে প্রচুর মুনাফা করছিল।
তারা বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা প্রতিষ্ঠানটিকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটি বন্ধ করে বিদেশে স্থাপন করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে কয়েকশ শ্রমিক-কর্মচারী কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেন। এর আগে প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আজম বলেন, কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানটির সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাকিস্তানি নাগরিক লাভজনক ও মানসম্পন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানাটি বন্ধের নীলনকশা চূড়ান্ত করে যান। এই প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী এক হাজার এবং অস্থায়ী আরো ৩শ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। কারখানা বন্ধের ঘোষণায় তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
তিনি বলেন, ১৩শ মানুষকে পথে বসিয়ে এ দেশের সম্পদ কারখানাটি বন্ধের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যায় না। আমরা টাকা চাই না। কারখানা চালুর উদ্যোগ চাই।
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ ব্যবসা হচ্ছে না বলে অজুহাত দিচ্ছে, অথচ প্রতিবছর এই প্রতিষ্ঠান প্রচুর মুনাফা করছে। শেয়ার হোল্ডাররা মুনাফার অংশও পেয়েছেন। প্রতিবছর ভ্যাট ট্যাক্স দিচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই লোকসানি প্রতিষ্ঠান নয়।

২০১৩-১৭ সাল পর্যন্ত কারখানাটি প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা জাতীয় রাজস্ব খাতে জমা দিয়েছে। এ সময় নিট মুনাফা করেছে ৩৫১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এ প্রতিষ্ঠানে সরকারি শেয়ার ১৮ শতাংশ।
দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতায় গত ২৬ জুলাই পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কারখানার উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরদিন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সব উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রামের সভাপতি তপন দত্ত বলেন, কয়েক বছরে অপ্রয়োজনীয় মেশিনারি আমদানি, অবকাঠামো সংস্কার ও বর্জ্য নিরোধক প্রকল্প নিয়ে কারখানাটিকে লোকসানি প্রতিষ্ঠান দেখানোর অপচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কারখানাটি তবুও লাভজনক ছিল। গ্ল্যাক্সো বন্ধ করার অর্থ হচ্ছে এ দেশের মানুষকে মানসম্পন্ন ওষুধ সুলভে পাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া।
জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক সফর আলী বলেন, বাংলাদেশের আইন না মেনেই কারখানাটি বন্ধ করা হয়েছে। এটি ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। তিনি শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলনের পরামর্শ দিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলনে সুফল না এলে আমাদের রাজপথে নামা ছাড়া উপায় থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইলিয়াছ, সহসভাপতি মো. কামাল উদ্দিন, সহসাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম প্রমুখ।