শাহীনুর ইসলাম : লভ্যাংশ ঘোষণায় চমক দেখিয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারে বিনিয়োগকারীকে ২০ টাকা দিলেও দর ধরে রাখতে পারছে না। সর্বোচ্চ দরের পিরামিড ভেঙ্গে নিচে পড়ছে।
আশঙ্কায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ছাড়ছেন আর বেশি মুনাফার আশায় কিনছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ওয়ালটনের বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০০ শতাংশ নগদ এবং উদ্যোক্তাদের জন্য ৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ঘোষণা অনুযায়ী, ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা পাবেন ২০ টাকা এবং কোম্পানির পরিচালকরা নেবেন প্রতি শেয়ারে সাড়ে ৭ টাকা।
তবুও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৬ অক্টোবর কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সর্বোচ্চ ১০০৯ টাকা দরের পিরামিড ভেঙে পড়ছে। ২৪ অক্টোবর লভ্যাংশ ঘোষণায় চমক দিলেও পরদিন দরে প্রথম ধাক্কা লাগে, প্রতি শেয়ারের দাম কমে প্রায় ৯ শতাংশ।
ওয়ালটনের ২৩ সেপ্টেম্বর শেয়ার লেনদেন শুরু হওয়ার প্রথম দিনের দর ৩৭৮ থেকে সর্বোচ্চ ৬ অক্টোবর ১০০৯ টাকায় ওঠে। তবে ২৪ অক্টোবর লভ্যাংশ ঘোষণার পরই এই চিত্র বদলাতে থাকে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ওয়ালটনের শেয়ার হাত বদলের প্রতি মিনিটের চিত্র নিচে প্রকাশ করা হলো। দেখা যায়, অন্যদিনের তুলনায় শেয়ার হাত বদলের হার খুবই কম। গ্রাহক চাহিদা কম থাকায় দর নামতে শুরু করেছে।

অ্যানালাইসেসে দেখা যায়, সকাল ১০ টা ৩ মিনিটে ৭২৮ টাকায় দুটি, ১০টা ৪ মিনিটে ৭২০ টাকায় ৩০টি শেয়ার হাত বদল হয়। এরপরে ১১টা ৫৫ মিনিটে ৩ হাজার ৬৪টি শেয়ার ৭১০ টাকায় হাত বদল হয়। স্টক বাংলাদেশের গ্রাফে দেখা যায়, চাহিদার অনুপাতে দর পড়ছে। এরপরে দুপুর গড়িয়ে শেষ সময়েও শেয়ার হাত বদলের হার সামান্য বাড়লেও দাম খুব বাড়েনি।
২টা ২৯ মিনিটে ১ হাজার ৮১০টি শেয়ার ৭২০ টাকায় হাত হাত বদল হয়। দিন শেষে মোট হাত বদল হয়েছে ৬৬ হাজার ১৪৫টি শেয়ার। যা অন্য দিনগুলোর তুলনায় যা খুবই কম।

কোম্পানি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করলে রেকর্ড ডেট শেষে তা সমন্বয় হয়, যে কারণে দরপতন হয়। কিন্তু প্রথম সারির কোম্পানি ওয়ালটন নগদ লভ্যাংশ দিলেও দর কমতে থাকায় শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
কোম্পানির রেকর্ড ডেট ১৯ নভেম্বরের পরই তা দৃশ্যমান হয়।
প্রাথমিকভাবে ধারণা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের হুঁশিয়ারিতে এমন দৃশ্য। বিডিংয়ে যে সব কোম্পানি দর অতি মূল্যায়ন করেছে এবং প্রথম দিন থেকে যারা শেয়ার ধারণ করে দর বৃদ্ধির খেলা খেলছিলেন। তারা আটকা পড়ার ভয়ে দ্রুত শেয়ার ছেড়ে সরে দাঁড়াচ্ছেন, আর হিসাব না কষেই সাধারণ বিনিয়োগকারী তা কিনছেন।

সেপ্টেম্বরে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ধারণের পরিমাণ ছিল দশমিক ৪৫ শতাংশ, পরের অক্টোবর মাসে তা কমে হয়েছে দশমিক ৩৩ শতাংশ। সেই চিত্র ইতোমধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।
নীতিমালা ভেঙে বেশি দামে ওয়ালটনের নিলাম বা বিডিংয়ে দর অতিমূল্যায়ন করা হয়। এ নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোক ক্ষোভ প্রকাশ করলে গত ২১ অক্টোবর কমিশন জানায়, সেই সব প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘ব্যাখ্যা তলব করা হবে’। কমিশনের আইন অনুযায়ী বিডিং না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর কয়েক দিনেই চিত্র দ্রুত বদলাতে থাকে। আগামীতে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির আগেই সাধারণ বিনিয়োগকারীর ঘাড়ে পড়ছে সব।
যে কারণে অক্টোবর মাসে শেয়ার হাত বদল এবং ধারণেন চিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। চলতি নভেম্বর মাসেও অনেক কমেছে, সেই চিত্র ডিসেম্বর মাসে ডিএসই প্রকাশ করবে। এদিকে আশঙ্কায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছাড়ছেন আর বেশি মুনাফার আশায় কিনে ফাঁস পরছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। (ডিএসইর ওয়েবসাইটের লিংক, আরো জানতে দেখুন)