অ্যাপোলো ইস্পাতের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।ফলে আইপিওর চাঁদা তুলতে আর কোনো বাধা থাকল না কোম্পানিটির। তবে এই প্রতিষ্ঠানকে ঋণখেলাপি আখ্যায়িত করে এর আইপিও বাতিলের দাবি জানিয়েছে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদসহ পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অ্যাপেলো ইস্পাত ১০ কোটি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ২২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। প্রতিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারে ১২ টাকা প্রিমিয়াম নেয়া হবে। এতে আইপিওতে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য পড়বে ২২ টাকা।বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৪৮৯তম সভায় অ্যাপোলো ইস্পাতের আইপিওর ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।বিএস্ইসির নির্বাহী পরিচালক ও কমিশনের মুখপাত্র সাইফুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডকে গত ৪৬০তম কমিশন সভায় প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের অনুমতি দেয়া হয়। পরে ৪৬৮তম কমিশন সভায় ওই কোম্পানির প্রাথমিক চাঁদা গ্রহণের তারিখ স্থগিত করা হয়। চাঁদা নেয়া স্থগিত হওয়ার পর কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য আদালতের আদেশ অনুযায়ী পরিচালকদের কিছুসংখ্যক শেয়ার অভিযোগকারী শেয়ারহোল্ডাদের অনুকূলে হস্তান্তর করেছে। এ ছাড়া কোম্পানির করসংক্রান্ত বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোম্পানির সব পরিচালকের ঋণসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যা অ্যাপোলো ইস্পাতের সংশোধিত প্রসপেক্টাসে অন্তুর্ভুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে কোম্পানির দেয়া ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছে কমিশন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সার্বিক বিবেচনায় কমিশন বৃহস্পতিবারের সভায় অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ১০ টাকা মূল্যমানের ১০ কোটি সাধারণ শেয়ার প্রতিটি ১২ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২২ টাকায় ইস্যু করার প্রস্তাব অনুমোদন করে।এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ্টি কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের আগে চারটি বিষয় খতিয়ে দেখতে বিএসইসিকে চিঠি দেন।বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া চিঠিতে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন, কোম্পানিটির আইপিওতে যাওয়ার ব্যাপারে তার কাছে নালিশ এসেছে। বেশ কিছুদিন থেকে কোম্পানিটি অচল। আইপিওর মাধ্যমে তারা বেশ কিছু সম্পদ লুটের আয়োজন করে। তারা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেশ কিছু লোকের দাবি-দাওয়া মেটাতে পারে না। কোম্পানিটি এনবিআরের কর খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। বিষয়টি নিয়ে মামলা চলছে। তাই তাদের ব্যাপারে তদন্ত করা উচিত।
অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবিত তদন্তের মধ্যে চারটি বিষয় উল্লেখ করেন। এগুলো হলো- বিতাড়িত শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ, রাজস্ব বোর্ডে দেনা, লোকাল এলসির মাধ্যমে তারা কী রকম চুরি-চামারি করেছে সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা এবং প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ।পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে বিএসইসি এ কোম্পানির আইপিও-প্রক্রিয়া স্থগিত করে। একই সঙ্গে, অর্থমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে চারটি বিষয়ে তদন্তকাজ শুরু করে। কিন্তু মন্ত্রী নিজেই এক মাসের ব্যবধানে তার অবস্থান পরিবর্তন করেন বলে জানা যায়। তিনি আবার বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি লেখেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ কোম্পানির আইপিও স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।তবে অ্যাপোলো ইস্পাতের অনুমোদন না দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের একাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর উর রশীদ চৌধুরী নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “আমরা অ্যাপোলো ইস্পাতের আইপিও অনুমোদন বাতিলের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে চিঠি দিয়েছি। একটি ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে কোন যুক্তিতে বিএসইসি অনুমোদন দিল?” তিনি অ্যাপোলোর আইপিও বাতিলের দাবি জানান।এদিকে অ্যাপোলো ইস্পাত কোম্পানি সূত্র দাবি করে, গত কয়েক মাসের তদন্তে কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে কোম্পানি সব ধরনের নিয়মনীতি পরিপালন করে চলেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন তার নিয়ম অনুযায়ী স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে।অ্যাপোলোর প্রসপেক্টাস থেকে জানা যায়, আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ থেকে ১৫৩ কোটি টাকা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা হবে এবং ৬০ কোটি টাকা পরিবেশবান্ধব জার্মান প্রযুক্তির এনওএফ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে ব্যয় করা হবে। নতুন প্রকল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ইতিমধ্যে আমদানি করা হয়েছে, যা ২০১৪ সালের মাঝামাঝি নাগাদ বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে বলে কোম্পানি আশা করছে।
অন্যদিকে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি, এর অর্থ হলো ওই প্রতিষ্ঠান টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। অর্থাৎ তার ব্যবস্থাপনার দক্ষতা নেই। যে প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের টাকার সঠিক ব্যবহার করতে পারে না, তারা জনগণের টাকা কীভাবে ব্যবহার করবে? তাদের মতে, এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রিমিয়াম তো দূরের কথা, আইপিওর অনুমোদন দেয়াই উচিত নয়।